প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ার উপকারীতা
প্রোটিনের ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। ডিম শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কেউ হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করেন, কেউ আবার মুরগির। হাঁসের ডিমে একটা আঁশটে গন্ধ থাকায় অনেকেই খেতে চান না। আবার মুরগির ডিমেও অনেকের অরুচি। আমরা অনেকেই জানি না মুরগির না হাঁসের– কোন ডিমে পুষ্টি বেশি। ডিম হলো এই গ্রহের সবচেয়ে বেশি পুষ্টিতে ঠাসা খাবার। তাই একে 'সুপার ফুড'-এর শিরোপা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পুষ্টিবিজ্ঞানী সুব্রত খাশনবিশের মতে, 'ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত উচ্চমানের। এই প্রোটিন আমাদের মস্তিষ্ক আর পেশি গঠনে এবং রোজকার ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। ডিমে আছে এমন কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্থিরতা বাড়ায়।ডিমে আছে- প্রোটিন, উপকারি ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, কোলেস্টেরল (১০০ গ্রামে ৩৭৫ মিগ্রা), ভিটামিনের মধ্যে নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, থায়মিন, পিরিডক্সিন, ফোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, লিউটিন, জিয়াজেন্থিন, খনিজের মধ্যে রয়েছে- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফোরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, কপার, সেলেনিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে আছে- অলিক অ্যাসিড, লিনোলিক অ্যাসিড, লিনোলেনিক অ্যাসিড, আইকোসাপেন্টাইনোয়িক অ্যাসিড, ডকোহেক্সাইনোয়িক অ্যাসিড, পালমিটিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, আরাচিডোনিক অ্যাসিড এবং ২০ টি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড, যা ছাড়া শরীরে প্রোটিন তৈরি হয় না।পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রোটিনের স্বাভাবিক উত্স হলো ডিম। অথচ ডিমের খাদ্যগুণ সম্পর্কে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। সেই ধারণাগুলোর গলদ ঢেকে দিতেই ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার 'ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন' এর এক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব জুড়ে ডিমকে জনপ্রিয় করার কর্মসূচি হিসেবে 'ওয়ার্ল্ড এগ ডে' পালন করা হবে।
ডিমের মধ্যে যে অসংখ্য উপকারিতা আছে তার মধ্যে কিছু বিশেষ
গুণের কথা উল্লেখ করা হল,
১. মস্তিষ্কের কার্যকারীতা: ডিমের
মধ্যেomega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ওcholine থাকার কারণে ডিম মস্তিষ্কের কোষগুলির কার্যকারীতা বাড়ায়। পুষ্টিবিদদের
মতে ভালো স্মৃতিশক্তি পেতে হলে দিনে একটি করে সেদ্ধ ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
২. বিপাক হার বাড়ানো:বিশেষজ্ঞদের
মতে, দৈনিক একটি করে সেদ্ধ ডিম খেলে, বিপাক হার বৃদ্ধি পায়। কারণ ডিমে আছে, প্রোটিন ও
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
৩.AIDS/HIV প্রতিরোধক: ডিমের
মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকার কারণে ডিমAIDS, HIV ও টিউবারকিউলোসিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৪. দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে: চিকিৎসকদের
মতে, ডিমে যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে তা
দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ: পুষ্টিবিদদের
মতে ডিমেlecithin নামক পুষ্টি উপাদান থাকে। যা
কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ: ডিম
ভিটামিনA সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭. হৃদযন্ত্র সচল রাখা: ডিম ভিটামিন ও
নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে। যার ফলে আমাদের
হৃদযন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করে।
পুষ্টিবিদদের মতে, মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিম বেশি উপকারী।
কেন হাঁসের ডিম বেশি উপকারী
১. ১০০ গ্রাম মুরগির
ডিমে থাকে ১৪৯ কিলো ক্যালোরি এনার্জি। আর ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিম থেকে এনার্জি পাওয়া
যায় ১৮৫ কিলো ক্যালোরি।
২. কার্বহাইড্রেট
ও মিনারেলের পরিমাণ সমান হলেও হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে বেশি। দুই ডিমেই
থাকে ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, তামা, পটাশিয়াম, সোডিয়াম,
সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম
ও আয়রন।
৩. প্রতি ১০০
গ্রাম হাঁসের ডিমে রয়েছে ১৮১ কিলো ক্যালোরি খাদ্যশক্তি। আর মুরগির
ডিমে পাওয়া যায় ১৭৩ কিলো ক্যালোরি খাদ্যশক্তি।
৪. হাঁসের ডিমের
ফ্যাট থাকে ১৩.৭ গ্রাম, মুরগির ডিমে থাকে ১৩.৩
গ্রাম।
৫. সাইজে বড় হয় হাঁসের
ডিম। মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিম প্রায় ৫০ শতাংশ বড় হয়।
৬. হাঁসের ডিমের
কুসুম মুরগির ডিমের থেকে বড় হয়। এ ছাড়া ফ্যাটের পরিমাণও বেশি থাকে।
৭. নিউট্রিশনে
ভরপুর হাঁসের ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন
এ ও ডি, আয়রন মুরগির ডিমের থেকে বেশি।
ডিম খাওয়া না খাওয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক
রয়েছে। কেউ বলেন- প্রতিদিন ডিম খাবেন, কেউ
বলেন- একদম ডিম খাবেন না, ডিম খেলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে,
আর কেউ বলেন- ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশ খাবেন, আবার কেউ বলেন- সপ্তাহে বেশি হলে দুটো ডিম খাবেন।
well done
ReplyDelete